ছেলের হত্যাকারীদের বিচার দেখতে বাঁচতে চান শহীদ আবু সাঈদের বাবা-মা

১৬ জুলাই ২০২৪। সময় দুপুর দেড়টা। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) এক নম্বর ফটকের সামনে জমায়েত হন ‘কোটা সংস্কার’ আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। শুরু করে লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল ছোড়া। পুলিশের সঙ্গে যোগ হয় ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারী নেতাকর্মীরা। ভয়ে সবাই দৌড়ে পালাতে থাকে দিকবিদিক। শিক্ষার্থীদের দমনে পুলিশ প্রায় ২০০ রাউন্ড গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে। কিন্তু একজন দাঁড়িয়ে থাকে বুক টান করে, দুই হাত প্রসারিত করে, তার নাম আবু সাঈদ। মুহূর্তেই তার বুক ঝাঁজরা হয়ে যায় পুলিশের গুলিতে।

তখন ঘড়ির কাটায় ২টা বেজে ১৭ মিনিট। বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে ন্যুয়ে পড়ে। সড়কের একপাশ থেকে আরেক পাশে যেতেই ঢলে পড়েন সেখানে। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সময় ছিল বিকেল ৩ টা ৫ মিনিট। অন্যায়ের বিরুদ্ধে গুলির সামনে সাহসিকতার সঙ্গে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠা আবু সাঈদের মৃত্যুর আগ মুহূর্তের বিরল সেই ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশে। দৃশ্যটা হয়ে ওঠে প্রতীবাদের প্রতীক। সেদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা হয়_‘এটাই তো সাহস। সে মাথা নিচু করেনি।’

আজ তার শাহাদৎ বরণ করে নেওয়ার এক বছর। এই ৩৬৫ দিনে বাংলাদেশ পেয়েছে নতুনত্ব। আবু সাঈদের মৃত্যুতে অগ্নিগর্ভে রূপ নেয় কোটা আন্দোলন। কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন শেষ পর্যন্ত গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়। মৃত্যুঞ্জয়ী ছাত্র-জনতার গণপ্রতিরোধের মুখে ৫ আগস্ট টানা ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর আবু সাঈদকে স্মরণের মধ্যদিয়ে নতুন বাংলাদেশ সংস্কারে শুরু হয় নানা কার্যক্রম। কিন্তু এখনো বিচার এখনো অধরা। গ্রেপ্তার হয়নি আবু সাঈদ হত্যা মামলার মূলহোতারা। পরিবার, বন্ধুবান্ধব, সহপাঠী ও শিক্ষকসহ সকলের একটাই প্রশ্ন_‘বিচার হবে তো?’