চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি করা পুরোনো স্ক্র্যাপ লোহা ভর্তি একটি কনটেইনারে তেজস্ক্রিয়তার উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে কনটেইনারটির খালাস প্রক্রিয়া স্থগিত করেছে। গত এক দশকে এটি দ্বিতীয় ঘটনা। এর আগে ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে একটি কনটেইনারে রেডিয়াম–বেরিলিয়ামের মতো তেজস্ক্রিয় পদার্থ ধরা পড়েছিল।
বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বুধবার (৬ আগস্ট) কনটেইনারটি বন্দরের রেডিয়েশন শনাক্তকরণ যন্ত্র ‘মেগাপোর্ট ইনিশিয়েটিভ রেডিয়েশন ডিটেকটিভ সিস্টেম’-এর স্ক্যানারে ধরা পড়ে। অন্তত দুই দফা পরীক্ষার পর এতে তিন ধরনের রেডিওনিউক্লাইড আইসোটোপ—থোরিয়াম ২৩২, রেডিয়াম ২২৬ ও ইরিডিয়াম ১৯২—শনাক্ত হয়।
প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ে এক মাইক্রোসিয়েভার্টস মাত্রার বিকিরণ ধরা পড়লেও কাস্টমস কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, স্ক্র্যাপের স্তূপ ও কনটেইনারের পুরু দেয়ালের কারণে প্রকৃত মাত্রা এর চেয়ে বেশি হতে পারে। যদিও তারা বলছেন, এ মাত্রা আপাতত উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ নয়, তবে সতর্কতার জন্য খালাস বন্ধ করে কনটেইনারটি আলাদা স্থানে সরিয়ে রাখা হয়েছে।
তেজস্ক্রিয়তার সংকেত পাওয়ার পরপরই চট্টগ্রাম কাস্টমসের কর্মকর্তারা কনটেইনারটির খালাস স্থগিত করেন। বর্তমানে এটি নিরাপদ স্থানে রাখা হয়েছে। শীঘ্রই বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের বিশেষজ্ঞরা এসে বিস্তারিত পরীক্ষা করবেন বলে জানানো হয়েছে।
কাস্টমসের নথি অনুযায়ী, কনটেইনারটি ব্রাজিল থেকে ঢাকার ডেমরার আল আকসা স্টিল মিলস লিমিটেডের জন্য আমদানি করা হয়। তাদের কারখানায় লোহার রড তৈরির জন্য ১৩৫ টন স্ক্র্যাপ পাঁচটি কনটেইনারে করে আনা হয়। ৩ আগস্ট ‘এমভি মাউন্ট ক্যামেরন’ জাহাজে এসব কনটেইনার বন্দরের জিসিবি ৯ নম্বর জেটিতে পৌঁছায়। বুধবার খালাস প্রক্রিয়ার সময়ই কনটেইনারটির ভেতরে তেজস্ক্রিয়তার উপস্থিতি ধরা পড়ে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, তেজস্ক্রিয় পদার্থ শনাক্ত হওয়া কনটেইনারটি আপাতত কাস্টমসের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এর খালাস সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। বিশেষজ্ঞদের প্রাথমিক ধারণা, এসব তেজস্ক্রিয় পদার্থ স্ক্র্যাপ লোহার ভেতর শিল্পকারখানার পুরোনো যন্ত্রাংশ বা চিকিৎসা সরঞ্জামের অংশ হিসেবে মিশে আসতে পারে।
২০১৪ সালের ঘটনার পর বন্দরে রেডিয়েশন শনাক্তকরণ যন্ত্র স্থাপন করা হয়। তবে এবার শনাক্ত হওয়া পদার্থের মধ্যে ‘ইরিডিয়াম ১৯২’ বিশেষভাবে উদ্বেগজনক, কারণ এটি চিকিৎসা ও শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলেও ভুলভাবে ব্যবহৃত হলে মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কনটেইনারটি নিরাপত্তা বলয়ে রাখা হবে এবং আমদানিকারকের পক্ষ থেকে সঠিক তথ্য ও উৎস সম্পর্কে কাস্টমসকে ব্যাখ্যা দিতে হবে বলে জানানো হয়েছে।