মালদ্বীপ- শ্রীলঙ্কা হয়ে উঠা সম্ভব, প্রয়োজন নীতি সহায়তা-সমন্বয়

কেবল পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটিয়ে কাছের দেশ-মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা পর্যটকদের কাছ থেকে লাখ লাখ ডলার আয় করছে। বৈচিত্র্যেভরা পর্যটন খাতকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশেরও সেই সুযোগ রয়েছে। এ জন্য কেবল প্রয়োজন সরকারি বেসরকারি অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয় এবং সরকারের নীতি সহায়তা। বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে পূর্বকোণ আয়োজিত ‘চট্টগ্রামে পর্যটন সম্ভাবনা, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক টক শো’তে অতিথিরা এসব কথা বলেন।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় পূর্বকোণ স্টুডিওতে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বৃহত্তর চট্টগ্রামের পর্যটন নিয়ে কাজ করা পাঁচ তরুণ ট্যুর অপারেটর অংশ নেন। পাহাড়ি পর্যটন নিয়ে কাজ করা ‘ভ্রমণ পিপাসু’র ফাউন্ডার সোহেল ইব্রাহীম বলেন, রোমাঞ্চকর ট্রেইল ট্র্যাকিং, শীতল ঝর্ণায় জলকেলি, প্রকৃতির সঙ্গে সময় কাটাতে রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবনে প্রচুর পর্যটক আসেন। বিশেষ করে থানচি, লামা, রোয়াংছড়ি, রুমায় প্রচুর ইকো ট্যুরিজম তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, উদ্যোক্তারা পাহাড়ি এলাকায় ইকো ট্যুরিজম খাতে বিপুল বিনিয়োগ করেছেন। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রশাসনের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বাড়তে থাকায় এখন পর্যটক কমে গেছে। নীতি সহায়তা, সমন্বয় না থাকায় সম্ভাবনা থাকলেও মালদ্বীপ বা শ্রীলঙ্কার মতো আমরা এগোতে পারছি না।

পর্যটনের উন্নয়নে ট্যুরিজম বোর্ড ও পর্যটন কর্পোরেশন ঠিকভাবে কাজ করছে না বলে অভিযোগ প্রমোটিং বাংলাদেশ ট্যুরিজম অব প্রজন্ম চট্টগ্রামের প্রধান নির্বাহী জসিম চৌধুরীর। তিনি বলেন, এই দুই সংস্থা মূল দায়িত্ব এড়িয়ে হোটেল ব্যবসা, মেলা নিয়ে পড়ে আছে। তাদের গাফিলতি পর্যটন খাতকে ভোগাচ্ছে।

কর্ণফুলী নদীকে কাজে লাগিয়ে থাইল্যান্ডের মতো রিভার ক্রজ জনপ্রিয় করা সম্ভব বলে মনে করেন চট্টগ্রাম অনলাইন ট্যুরিজম এসোসিয়েশনের সভাপতি রশিদুল হাসান। তিনি বলেন, পলি জমায় কর্ণফুলীকে আমরা পর্যটনে কাজে লাগাতে পারছি না। প্রশাসনকে বারবার বলার পরেও কেবল আশ্বাসই পেয়েছি।

রশিদুল হাসান বলেন, সিটি ট্যুরকে জনপ্রিয় করতে সরকারি উদ্যোগ দরকার। ভালো বাস চালু, মানসম্মত শৌচাগার, বিমানবন্দর- রেলওয়ে স্টেশন- বাস কাউন্টারে ইনফরমেশন সেন্টার করা দরকার। নগরীতেই এতো এতো পর্যটন কেন্দ্র- সঠিক তথ্য পেলে পর্যটকরা এসব দেখতে আসবেন।

স্থানীয় সংস্কৃতির বিকাশ ঘটিয়ে পর্যটক বৃদ্ধি করা সম্ভব বলে মত দেন তাবু নিবাসী ট্রাভেল গ্রুপের ফাউন্ডার মিরাজ ইবনে নিজাম। তিনি বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামের মতো বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি দেশের অন্য কোথাও নেই। পরিবেশ দূষণ না করে, প্রাণ-প্রকৃতি বাঁচিয়ে পর্যটনকে আমাদের এগিয়ে নিতে হবে।

সরকারি বেসরকারি অংশীজনদের মধ্যে সমন্বয় এবং সরকারের নীতি সহায়তা পেলে দেশের পর্যটন শিল্প সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে বলে জানান চিটাগাং ট্যুরিস্ট গ্যাংয়ের ফাউন্ডার এডমিন ওয়াফিউল হক। তিনি বলেন, নীতি সহায়তা পেলে আমাদের আর এক পা এগোতে ১০ পা পেছাতে হবে না।

ওয়াফিউল হক বলেন, সেন্টমার্টিন, সাজেকসহ আকর্ষণীয় নানা পর্যটনকেন্দ্র নিয়ে সরকারের একেক সংস্থা একেক রকম সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এভাবে পর্যটকরা যেমন বিভ্রান্ত হচ্ছেন, আমরা দ্বিধার মধ্যে পড়ে যাচ্ছি। ফলে নতুন করে বিনিয়োগ হচ্ছে না। আমরা সবার মধ্যে সমন্বয় চাই। পর্যটকদের ভালো সেবা দিতে চাই।