হৃদরোগ সেবার সংকটে চট্টগ্রাম

হৃদরোগের চিকিৎসায় বৃহত্তর চট্টগ্রামের ১১ জেলার প্রায় তিন কোটি মানুষের ভরসার স্থল চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ।

কিন্তু মাত্র ১২০ শয্যার এই ওয়ার্ডে প্রতিদিন ভর্তি থাকে ২৫০ জনেরও বেশি রোগী। অথচ শয্যা, যন্ত্রপাতি ও জনবল সংকটের কারণে অনেক রোগীকে মেঝেতে শুয়ে বা বসে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। রোগীর চাপ দিনদিন বাড়লেও আধুনিক ও বিশেষায়িত চিকিৎসার সুযোগ ঢাকার বাইরে প্রায় নেই। এমন নানা সংকটের মধ্যেই চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদেরও। দেশ স্বাধীন হওয়ার এত বছর পরেও চট্টগ্রামে এখনো গড়ে উঠেনি হৃদরোগীদের জন্য বিশেষায়িত কোনো হাসপাতাল।

এদিকে, চট্টগ্রামে হৃদরোগীদের জন্য সরকারি পর্যায়ে আধুনিক ও বিশেষায়িত চিকিৎসা এখনও অপ্রতুল। মেশিনের অভাব, জনবল সংকট এবং কম শয্যার কারণে নাজুক অবস্থায় রোগী ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাই নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপন, জনবল বৃদ্ধি এবং আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা স্থাপনের প্রয়োজন জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

খবর নিয়ে জানা গেছে, চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে দুটি ক্যাথল্যাব মেশিন থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে একটি নষ্ট। সচল মেশিনটিও মাঝে মাঝে ব্যর্থ হয়ে যায়। দৈনিক রোগীর চাপ এতটাই বেশি যে, চিকিৎসকরা সবাইকে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। বিভাগে ইকোকার্ডিওগ্রাফি মেশিনও মাত্র একটি। এ মেশিন দিয়েই প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ জন রোগী পরীক্ষা করতে পারেন। অপরদিকে, ইসিজি মেশিনের সংখ্যাও মাত্র একটির বেশি নয়।

এদিকে, অত্যাধুনিক হৃদরোগ চিকিৎসার জন্য এনজিওগ্রাম, পেসমেকার স্থাপন, এনজিওপ্লাস্টি ও পিটিএমসি জরুরি। কিন্তু চমেক হাসপাতালের এনজিওগ্রাম মেশিন দীর্ঘদিন ধরে অচল। সচল মেশিন দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩০ জনের এনজিওগ্রাম এবং ৫ থেকে ১০ জনের এনজিওপ্লাস্টি করা হয়। নতুন মেশিন আসার কথা থাকলেও ছয় মাস ধরে সেটি পৌঁছায়নি। নার্স সংখ্যা গত বছর ৬৪ থেকে কমে ৪০ এরও কম। শিক্ষানবিশ নার্সরাও রয়েছেন। আয়া ও ওয়ার্ডবয়ের পদ নেই; আউটসোর্সিংয়ের লোক দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে।

চিকিৎসকরা জানান, এনজিওগ্রাম ছাড়াও হার্টে স্থায়ী পেসমেকার স্থাপন এবং পেরিফেরাল এনজিওগ্রামের মতো জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা দিতে হিমশিম অবস্থা। বেসরকারি হাসপাতালে এই সেবা মিললেও খরচ অত্যধিক হওয়ায় গরিব-অসহায় রোগীরা সেখানে যেতে পারছেন না।

চমেক হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. কাজী শামীম আল মামুন বলেন, রোগীর চাপ অনেক বেশি। প্রতিদিন দীর্ঘ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সেবা বাড়াতে হলে প্রয়োজন আরও চিকিৎসক, নার্স ও অতিজরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম।

চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন নতুন রোগী ভর্তি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ জন। শয্যা সংকট ও যন্ত্রপাতির অভাবে অনেক রোগীকে বারান্দা, ওয়ার্ডের ফ্লোর বা গলিতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতি রোগী ও তাদের পরিবারের জন্য মানসিক চাপ ও ভোগান্তি বাড়াচ্ছে।

হৃদরোগ বিভাগের প্রধান, সহযোগী অধ্যাপক নূর উদ্দিন তারেক বলেন, বিভাগটি চট্টগ্রামের মানুষের ভরসা। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাব এবং রোগীর চাপ আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। মাঝেমধ্যে যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেলে রোগীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিব্রত।