ঘষামাজা করে ৪০ কোটি টাকা কমিয়ে দেওয়ার নথিপত্র জব্দ

 

ঘষামাজা করে ৪০ কোটি টাকা কমিয়ে দেওয়ার নথিপত্র জব্দ

চসিকে দুদকের অভিযান

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ২৪ অক্টোবর, ২০২৫ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইছহাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ইনকনট্রেড লিমিটেডের হোল্ডিংয়ের বিপরীতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বার্ষিক মূল্যায়নকৃত পৌরকর (গৃহকর ও অন্যান্য রেইট) থেকে ঘষামাজা করে ২০ কোটি টাকা করে ৪০ কোটি টাকা কমিয়ে দেয়ার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ অনিয়মকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে দেখছে সংস্থাটি। তাই এ বিষয়ে তাদের নিজস্ব প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেবে দুদক।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, ইছহাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ইনকনট্রেড লিমিটেডের পৌরকর নির্ধারণে ২০১৭–২০১৮ অর্থবছরে বার্ষিক মূল্যায়ন (অ্যাসেসমেন্ট) করা হয়। এর মধ্যে ইছহাক ব্রাদার্সের হোল্ডিংয়ের বিপরীতে ২৬ কোটি ৩৮ লাখ ১৯ হাজার ২৫০ টাকা ও ইনকনট্রেড লিমিটেডের হোল্ডিংয়ের বিপরীতে ২৫ কোটি ৬৭ লাখ ৪ হাজার ৭৫০ টাকা পৌরকর নির্ধারণ করেন এসেসর। পরবর্তীতে আপিল রিভিউ বোর্ডের শুনানিতে উপস্থাপনের সময় ‘ফিল্ডবুক’ এবং ‘পি ফরম’ (কর নির্ধারণ ও মূল্যায়নের বিরুদ্ধে আবেদন ফরম) থেকে ‘২’ সংখ্যাটি মুছে দেয়া হয়। অর্থাৎ ২৫ কোটি ও ২৬ কোটি থেকে ২ মুছে দেয়া হয়। এতে কমে যায় ২০ কোটি টাকা টাকা করে ৪০ কোটি টাকা। ফলে ইছহাক ব্রাদার্সের হোল্ডিংয়ের বিপরীতে মূল্যায়ন ৬ কোটি ৩৮ লাখ ১৯ হাজার ২৫০ টাকা এবং ইনকনট্রেড লিমিটেডের মূল্যায়ন ৫ কোটি ৬৭ লাখ ৪ হাজার ৭৫০ টাকা দেখিয়ে শুনানি করে চূড়ান্ত মূল্য নির্ধারণ করা হয়।

এ বিষয়ে দৈনিক আজাদীতে গত মঙ্গলবার ‘২৬ থেকে দুই মুছে ২০ কোটি টাকা হাওয়া!’ এবং পরদিন বুধবার ‘এবার ২৫ কোটি টাকা হয়ে গেল ৫ কোটি টাকা’ শিরোনামে দুটো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন দুটোর সূত্র ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার টাইগারপাস সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ে অভিযান চালায় দুদক। এসময় প্রয়োজনীয় নথিপত্রও জব্দ করে দুদক।

অভিযান শেষে দুদক উপ–পরিচালক সায়েদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ইছহাক ব্রাদার্সের ভ্যালুয়েশন ২৬ কোটি টাকা ছিল। পরে তা ঘষামাজা করে ৬ কোটি টাকা করা হয়। ইনকনট্রেডের ২৫ কোটি টাকা ভ্যালুয়েশন ছিল। তা ঘষামাজা করে ৫ কোটি টাকা করা হয়েছে। আমরা এখানে ফিল্ড বুক, ট্যাক্স অ্যাসেসমেন্ট তালিকা, পাবলিশড ডকুমেন্ট এবং যে তদন্ত প্রতিবেদন, তা দেখেছি। রাজস্ব সার্কেলটির কর কর্মকর্তা, উপ কর কর্মকর্তা ও হিসাব বিভাগের কর্মচারীরা সম্পৃক্ত। এটা তো ফৌজদারি অপরাধ। আমরা আজ নথিপত্র নিয়ে যাব। ফাইন্ডিংস কমিশনকে জানাব। সেখান থেকে যে নির্দেশনা আসবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিব।

পরবর্তী ব্যবস্থা কী নেয়া হবে জানতে চাইলে বলেন, এটা সিটি কর্পোরেশনের শিডিউলভুক্ত অপরাধ না। তারা হয়তো তালিকা করে প্রতিষ্ঠান দুটিকে ব্ল্যাক লিস্টেড করতে পারে। এটা যেহেতু দুদকের শিডিউলভুক্ত অপরাধ, তাই দুদক দুদকের মতো কাজ করবে।

অভিযান শেষে চসিকের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন সাংবাদিকদের বলেন, ইতোমধ্যে অনিয়মের বিষয়টি তদন্তের মাধ্যমে উদ্‌ঘাটন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুদক তদন্ত প্রতিবেদন চেয়েছে। দুদককে সিটি কর্পোরেশনের তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, যে তিনজন হিসাব সহকারী ছিলেন, তারা বলেছেন ডিটিও এবং টিও এর নির্দেশে তারা কাজটি করেছেন। প্রতিবেদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেন তারা কাজটি করেছেন সেটা তদন্তে আসেনি। মেয়র মহোদয় এ বিষয়ে খুব কঠোর। তিনি বলেছেন, প্রতিটা বিষয় যেন স্বচ্ছভাবে হয়।

এদিকে চসিক সূত্রে জানা গেছে, ইছহাক ব্রাদার্সের শুনানি হয়েছে ২০২১ সালের ১৩ জুন এবং ইনকনট্রেড লিমিটেডের শুনানি হয়েছে ২০২০ সালের ২৪ ডিসেম্বর। পরবর্তীতে অডিটে বিষয়গুলো ধরা পড়লেও আমলে নেননি চসিকের তৎকালীন মেয়রসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। সর্বশেষ ডা. শাহাদাত হোসেন মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর গত ১৩ জানুয়ারি চসিকের আইন কর্মকর্তা মহিউদ্দিন মুরাদকে আহ্বায়ক ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। গত সোমবার ও মঙ্গলবার সিটি মেয়রকে পৃথক দুটি তদন্ত রিপোর্ট হস্তান্তর করা হয়। এতে ঘষামাজা করে ২০ কোটি টাকা করে দুই প্রতিষ্ঠানের ৪০ কোটি টাকা কমিয়ে দেয়ার সত্যতা পাওয়া যায়। এরপর বুধবার ঘটনায় জড়িত চসিকের কর কর্মকর্তা নুরুল আলম ও উপ–কর কর্মকর্তা জয় প্রকাশ সেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এছাড়া ঘটনায় সহায়তা করায় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া তিন হিসাব সহকারী মঞ্জুর মোর্শেদ, রূপসী রাণী দে ও আহসান উল্লাহকে। একই ঘটনায় উপ–কর কর্মকর্তা আবদুল কাদেরের জড়িত থাকার সত্যতা পেলেও অবসরে থাকায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।