১১৭ কারখানা বন্ধ, বেকার ৫১ হাজার

দৈনিক চট্টগ্রামের কন্ঠ

সর্বশেষ:

‘কৌশলে’ পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা ১১৭ কারখানা বন্ধ, বেকার ৫১ হাজার ৪৫ প্রার্থীর ভাগ্য পরীক্ষা কাল ইউপিডিএফের হয়ে চাঁদা আদায়কারী আটক পানছড়িতে সাগরে ফের লঘুচাপ, এবার নিম্নচাপ হয়ে বৃষ্টি হতে পারে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে এনসিপি ‘কৌশলে’ পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা ১১৭ কারখানা বন্ধ, বেকার ৫১ হাজার ৪৫ প্রার্থীর ভাগ্য পরীক্ষা কাল ইউপিডিএফের হয়ে চাঁদা আদায়কারী আটক পানছড়িতে সাগরে ফের লঘুচাপ, এবার নিম্নচাপ হয়ে বৃষ্টি হতে পারে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে এনসিপি ‘কৌশলে’ পালাচ্ছে রোহিঙ্গারা ১১৭ কারখানা বন্ধ, বেকার ৫১ হাজার ৪৫ প্রার্থীর ভাগ্য পরীক্ষা কাল ইউপিডিএফের হয়ে চাঁদা আদায়কারী আটক পানছড়িতে সাগরে ফের লঘুচাপ, এবার নিম্নচাপ হয়ে বৃষ্টি হতে পারে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে এনসিপি

 

১১৭ কারখানা বন্ধ, বেকার ৫১ হাজার

চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের তথ্য

১১৭ কারখানা বন্ধ, বেকার ৫১ হাজার

নাজিম মুহাম্মদ

 

২৫ অক্টোবর, ২০২৫ | ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ

 

দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত এক বছরে চট্টগ্রামে পোশাক-ইস্পাতসহ বিভিন্ন ধরনের ৫০টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। অস্থায়ীভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে আরও ৬৭টি কারখানা। বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানার মধ্যে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান এবং আলোচিত শিল্পগ্রুপ- নাসা গ্রুপের প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

 

শিল্প পুলিশের করা একটি তালিকায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। ওই তালিকায় বলা হয়েছে, স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া ৫০টি কারখানার মোট শ্রমিক সংখ্যা আট হাজার ৭৪৩ জন। আর অস্থায়ীভাবে বন্ধ রাখা কারখানাগুলোর শ্রমিক সংখ্যা প্রায় ৪৩ হাজার। সবমিলিয়ে গত এক বছরে স্থায়ী ও অস্থায়ীভাবে বন্ধ থাকা ১১৭ কারখানার ৫১ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন।

শুধু কারখানা বন্ধ নয়, গত এক বছরে ৭০টি কারখানায় ৩১৫ বার শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে বলেও শিল্প পুলিশের কাছে তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ গত ১৪ ও ১৫ অক্টোবর প্যাসিফিক গ্রুপের কয়েকটি কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটে। এ কারণে এসব কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে গত বৃহস্পতিবার থেকে সেগুলো পুনরায় সচল হয়।

 

 

 

 

আর্থিক সংকট, ঋণের পরিমাণ বেশি থাকায় ব্যাংক থেকে নতুন ঋণ না পাওয়া, এলসি জটিলতা ও কাজের অর্ডার না থাকাসহ নানা কারণে এসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে বলে শিল্প পুলিশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন বলেন, নানা কারণে এসব কারখানা বন্ধ হয়ে গেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মালিকপক্ষ শ্রমিকদের পাওনা দিয়ে দিয়েছে।

 

 

 

বন্ধ কারখানার ২২টিই পোশাক সংশ্লিষ্ট: গতবছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত চট্টগ্রামে ২২টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে এ বছরের শুরু থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে বন্ধ হয়ে গেছে ১১টি পোশাক কারখানা। কাজের অর্ডার না থাকা এবং মালিকপক্ষের আর্থিক ‘অসচ্ছলতার’ কারণে কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে গেছে বলে শিল্প পুলিশের করা তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে।

 

 

 

জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র পরিচালক রাকিবুল আলম চৌধুরী জানান, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে যে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হয়েছে সেখানে টিকে থাকা অনেক ডিফিকাল্ট। খুব স্ট্রং কমপ্লায়েন্স ফ্যাক্টরি না হলে টিকে থাকা কষ্টের। বায়িং হাউসের মাধ্যমে যেসব ফ্যাক্টরি ছিল তারা কোনভাবে কুলিয়ে উঠতে পারছিল না। যে কারণে কারখানা বন্ধ করতে হচ্ছে।

 

তিনি বলেন, মার্কিন ট্যারিফ ঘোষণার পর অর্ডার অনেক কমে গেছে, দামও কমে গেছে। তাছাড়া ব্যাংকে এলসি খোলা চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে কয়েকটি ব্যাংক একীভূত হয়ে একটি ব্যাংকে পরিণত হওয়ায় কেউ গার্মেন্টসের জন্য সহজে এলসি খুলতে পারছে না। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অনেক কারখানার মালিক বর্তমান পরিস্থিতির সাথে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে না পেরেও ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে।

 

 

 

ইপিজেডে বন্ধ চার কারখানা: বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ইপিজেডেও ৪টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এসব কারখানা হলো- নাসা গ্রুপের মালিকানাধীন টয় উড (বিডি) কোম্পানি লিমিটেড ও এমএনসি অ্যাপারেলস লিমিটেড। অপর দুটি প্রতিষ্ঠান হলো- থিয়ানিস অ্যাপারেলস লিমিটেড এবং জেএমএস গার্মেন্টস লিমিটেড। ইপিজেডের এসব কারখানায় মোট চার হাজার ৮১৮ জন শ্রমিক কাজ করতেন।

 

 

 

শিল্প পুলিশ বন্ধ কারখানার যে তালিকা করেছে, তার মধ্যে থিয়ানিস অ্যাপারেলস বন্ধের কারণ উল্লেখ করা হয়েছে মালিকের আর্থিক সংকট ও এলসি জটিলতা। আর জেএমএস গার্মেন্টস বন্ধের কারণ উল্লেখ আছে মালিকের আর্থিক সংকট। এছাড়া নাসা গ্রুপের দুই কারখানা বন্ধের কারণ উল্লেখ করা হয়েছে ব্যাংক জটিলতা, আর্থিক সংকট এবং কাজের অর্ডার না থাকা।

 

 

 

বন্ধ আরামিট গ্রুপের তিন প্রতিষ্ঠান: স্থায়ীভাবে বন্ধ হওয়া কারখানার তালিকায় রয়েছে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের তিনটি কারখানা। এগুলো হলো- আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেড, আরামিট ফুটওয়্যার ও আরামিট পাওয়ার লিমিটেড। তিনটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের স্ত্রী রুখমিলা জামান। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি ও সেপ্টেম্বর মাসে কারখানাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। আর্থিক অসচ্ছলতা ও কাঁচামাল সংকটের কারণে কারখানাগুলো বন্ধ করা হয়েছে বলে শিল্প পুলিশের তালিকায় দেখানো হয়েছে।

 

 

 

এছাড়া গত এক বছরে ১৩টি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড ও স্টিলমিল, প্যাকেজিং কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার তথ্য উঠে এসেছে শিল্প পুলিশের তালিকায়। জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স এন্ড রিসাইক্লার্স এসোসিয়েশনের (বিএসবিআরএ) সহ-সভাপতি ও পিএইচপি ফ্যামিলির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহিরুল ইসলাম রিংকু বলেন, হংকং কনভেনশন অনুযায়ী, গত ২৬ জুনের মধ্যে বাংলাদেশের সব শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডকে গ্রিন শিপইয়ার্ডে রূপান্তরের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। তবে মাত্র ১৭টি শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড সেটি করতে পেরেছে। এ কারণে অনেকের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।

 

 

 

তিনি বলেন, বর্তমানে জাহাজ আমদানি তীব্রভাবে কমে গেছে। গত আগস্টে সীতাকুণ্ডে জাহাজ আমদানির জন্য নতুন কোন এনওসি দেওয়া হয়নি। জুনে ৯০ হাজার টন ওজনের সাতটি ও জুলাইয়ে ৮০ হাজার টন ওজনের আটটি জাহাজ আনা হয়েছিল। ব্যাংকগুলো এলসি দিতে পারছে না। ঋণ দিতে পারছে না। তাই সংকটে পড়ে অনেক শিপইয়ার্ড তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে