চট্টগ্রামে করোনায় মারা গেছে আরো দুজন, আক্রান্ত ১২

চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যু বাড়ছে। গত দুদিনের ব্যবধানে করোনায় মারা গেছেন তিনজন। এর মধ্যে গতকাল মারা গেছেন ২ জন। এছাড়া সারা দেশের হিসেবে মারা গেছেন ৫ জন। দীর্ঘ বিরতির পর হঠাৎ করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুহার বাড়ায় জনমনে উদ্বেগ বাড়ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার সাব–ভ্যারিয়েন্ট অমিক্রন এক্সবিবি ভারতের পাশাপাশি আমাদের দেশের সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। ভাইরাসের নতুন এই ভ্যারিয়েন্টে লোকজন আক্রান্ত হলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার বালাই নেই। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া হলেও সেইসব নির্দেশনা মানছেন না কেউ। শতকরা ৯৯ শতাংশ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। এছাড়া সামাজিক দূরত্ব কিংবা জনসমাগম এড়িয়ে চলার বিষয় নিয়ে কারো মাথাব্যথা নেই। এমন অবহেলা হলে সামনের দিনগুলোতে করোনার বিস্তার বাড়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ১২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পটিয়া উপজেলার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইরশাদ (১৪) নামে এক কিশোর এবং কর্ণফুলী উপজেলার বাসিন্দা ইয়াসমিন আক্তার (৪৫) নামে এক নারী মারা গেছেন। এর মধ্যে ইরশাদের কিডনি রোগ ছিল। ইয়াসমিনের যক্ষ্মা ধরা পড়ে এবং তার ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল।

অপরদিকে গতকাল সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ১২টি ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে একজন, এপিক হেলথ কেয়ারে একজন, পার্কভিউ হাসপাতালে ২ জন, ন্যাশনাল হাসপাতালে একজন এবং মেট্রোপলিটন হাসপাতালের নমুনা পরীক্ষায় একজনের করোনা শনাক্ত হয়। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৭৪ জন। এর মধ্যে নগরীতে ৬৬ জন এবং উপজেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ৮ জন। এছাড়া গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে মোট মারা গেছেন ৪ জন।
এদিকে দেশে ২০২০ সালে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর থেকে গতকাল পর্যন্ত ২০ লাখ ৫১ হাজার ৯৭৮ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৯ হাজার ৫১৫ জন মারা গেছেন। এছাড়া গতকাল সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় একদিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ বছর সারা দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৬ জনে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেউ করোনা আক্রান্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে বাসায় চিকিৎসা নিতে পারবেন। তবে করোনা যেহেতু সংক্রামক রোগ, তাই রোগীকে আলাদা ঘরে থাকতে হবে। অন্তত ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। কেবল শ্বাসকষ্ট কিংবা অন্যান্য জটিলতা দেখা দিলে হাসপাতালে যেতে হবে। না হলে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। অনেক রোগীর কাশি বা জ্বরের মতো সাধারণ লক্ষণ দেখা যায় না। পরিবর্তে গিঁটে ব্যথা, মাথাব্যথা, গলাব্যথা, পিঠে ব্যথা, ক্লান্তি, ক্ষুধা হ্রাস, হালকা থেকে মাঝারি শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া দেখা যায়। তবে বুকের এঙরে বা সিটি স্ক্যানের মতো ইমেজিং পরীক্ষায় ফুসফুসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। করোনায় বয়স্ক ব্যক্তি, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি অথবা দীর্ঘমেয়াদি রোগ আছে (যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ) এমন ব্যক্তিরা গুরুতর জটিলতার মুখোমুখি হতে পারেন। তাই নাগরিকদের জনাসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে।

নাক–মুখ ঢেকে সঠিকভাবে মাস্ক পরতে হবে। এছাড়া ঘন ঘন হাত ধোয়া, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা, কমপক্ষে দেড় মিটার শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং টিকার বুস্টার ডোজ নেওয়া না থাকলে বুস্টার ডোজ নিতে হবে। এছাড়া করোনা ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে পরীক্ষা করাতে হবে এবং রোগ শনাক্ত হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, করোনা মোকাবেলায় প্রথম কথা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে আগের মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে মাস্ক পরতে হবে। কারণ নিজে সুরক্ষিত থাকলে পরিবারের অন্যরা সুরক্ষিত থাকবে।