পুরনো যন্ত্রাংশ, ব্র্যান্ডহীন বাতি ও তারে ১০ সড়কে আলোকায়ন

নগরের হিলভিউ আবাসিক এলাকার ১০টি সড়ক আলোকায়নে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) গৃহীত একটি প্রকল্পের ‘বি ও কিইউ’তে (বিল অব কোয়ানটিটি) যে পরিমাণ মালমাল ধরা ছিল বাস্তবে তার চেয়ে কম স্থাপন করা হয়েছে। এমনকি শিডিউল বহির্ভূতভাবে প্রস্তাবিত ব্র্যান্ডের বাতির পরিবর্তে ‘অখ্যাত’ ব্র্যান্ডের বাতি লাগানো হয়। স্থাপিত তারও ছিল ব্র্যান্ডহীন। এছাড়া স্থাপিত দুই ধরনের যন্ত্রাংশ ছিল পুরনো।

প্রকল্পটিতে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর তা তদন্তে চসিকের গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে এসব ‘অনিয়ম’–এর চিত্র উঠে আসে। প্রতিবেদনে কাজের প্রতিটি আইটেমের পরিমাণ ও গুণগত মানের দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স মিশুক কন্সট্রাকশন’ এবং চসিকের বিদ্যুৎ বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী কামাল হোসেন সেলিমের ওপর বর্তায় বলে উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে গুণগত মান নিশ্চিত হওয়ার জন্য চুয়েট অথবা স্বনামধন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরীক্ষা করার সুপারিশ করা হয়।

চসিক সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের (২০২৪) ১১ জুলাই থেকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে হিলভিউ আবাসিক এলাকার ১০টি সড়ক আলোকায়ন করার জন্য ‘মেসার্স মিশুক কন্সট্রাকশন’কে কার্র্যাদেশ প্রদান করে বিদ্যুৎ বিভাগ। এতে চুক্তিমূল্য ছিল ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। নিয়োগকৃত ঠিকাদার ‘মেসার্স মিশুক কন্সট্রাকশন’ কাজ সমাপ্ত হয়েছে উল্লেখ করে চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিল তৈরির জন্য ‘গোপনে’ নথি উপস্থাপন করেন বিদ্যুৎ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সহকারী প্রকৌশলী। এরপর ২৫ জানুয়ারি চসিকের দুই বাতি পরিদর্শক মোহাম্মদ মহসিন ও বাসু বিশ্বাস এ বিষয়ে সংস্থার প্রধান নির্বাহী বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে প্রকল্পটিতে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ করেন। এরপ্রেক্ষিতে ২৭ জানুয়ারি অভিযোগ তদন্তে চসিকের তৎকালীন প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেমকে দায়িত্ব দিয়ে অফিস আদেশ জারি করেন চসিক সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন। এর কিছুদিন পর বদলি হয়ে চলে যান তদন্ত কমকর্তা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেম। তবে সম্প্রতি তিনি তদন্ত প্রতিবেদন প্রেরণ করেন চসিকে।

এ বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। সুপারিশের আলোকে আমরা প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

কী আছে প্রতিবেদনে : তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, চুক্তিপত্রের ‘বি ও কিইউ’তে (বিল অব কোয়ানটিটি) এলইডি স্ট্রিট লাইট ব্র্যান্ডের কিছু সুনির্দিষ্ট নাম ছিল। কিন্তু সরেজমিন পরিদর্শনকালে চুক্তিপত্রে উল্লেখিত ব্র্যান্ডের কোনো বাতি পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘স্থাপনকৃত বাতির গায়ে ব্র্যান্ড উল্লেখ না থাকায় সেগুলো অখ্যাত কোনো প্রস্তুতকারী কর্তৃক প্রস্তুত করা হয়েছে; যা সিডিউল বহির্ভূত প্রতীয়মান হয়। সরবরাহকৃত বৈদ্যুতিক তারেও কোনো ব্র্যান্ডের নাম উল্লেখ নেই’।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, হিলভিউ আবাসিক এলাকার ১০টি রাস্তায় আলোকায়নের জন্য ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকায় মেসার্স মিশুক কনস্ট্রাকশনের সঙ্গে চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। সরবরাহকৃত কাজের প্রধান আইটেম ১০৫টি লাইটসহ পাইপ ব্রেকেট, ক্যাবলসহ আনুষাঙ্গিক মালামাল রয়েছে। সরবরাহকৃত মালামালগুলো এ সংক্রান্ত ‘গ্রহণ কমিটি’ কর্তৃক গ্রহণ করার পর কার্যস্থলে লাগানোর কথা। কিন্তু এখানে গ্রহণ কমিটি ছাড়াই মো. কামাল হোসেন সেলিম এককভাবে মালামালসমূহ গ্রহণ ও স্থাপন করেন বলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানটি তদন্ত কমিটিকে জানায়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বা সরবরাহকারীর নিকট হতে মালামালসমূহ বুঝে নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জড়িত না করে মো. কামাল হোসেন সেলিম এককভাবে আলোচ্য কাজটি বাস্তবায়ন করেছেন; যা চাকুরি বিবি পরিপন্থি এবং স্বার্থের সংঘাত। তাছাড়া সরবরাহকৃত মালামালের পরিমাণ ও গুণগতমান কমিটি কর্তৃক যাচাই না করেই তিনি স্থাপন করেছেন। এতে দুর্নীতি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার বা সরবরাহকারীও আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, স্থাপিত বিভিন্ন মালামালে বি ও কিইউ পরিমাণ অপেক্ষা কম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ২৫ আরএম ক্যাবল–৪৫০০ মিটারের বিপরীতে ৩৯৭০ মিটার, জিআই পুল ব্রেকেট–১০৫টি’র বিপরীতে ৯৪টি এবং স্পুল রেক–১০৫টি’র বিপরীতে ৮৬টি স্থাপন করা হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, গত ১২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যার পর প্রকল্প এলাকার পাঁচটি রাস্তা পরিদর্শন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। এসময় পরিদর্শনকালে ৮–১০টি বাতি বন্ধ পাওয়া যায় এবং কয়েকটি ‘পাইপ ব্রেকেট’ ও ‘স্পুলরেক’ পুরনো পাওয়া যায়। এ বিষয়ে প্রকৌশলী কামাল হোসেন সেলিমের কাছে জানতে চাইলে তদন্ত কর্মকর্তাকে জানান, বন্ধ বাতিগুলো সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার পরিবর্তন করে দিবে। তবে পুরাতন মালামালের বিষয়ে কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি প্রকৌশলী সেলিম।

তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল কাশেম তার মতামতে উল্লেখ করেন, কাজের প্রতিটি আইটেমের পরিমাণ ও গুণগত মানের দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারী মেসার্স মিশুক কন্সট্রাকশন এবং সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী মো. কামাল হোসেন সেলিমের ওপর বর্তায়। এক্ষেত্রে বিল সুপারিশের পূর্বে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের প্রকৌশলী এবং নির্বাহী প্রকৌশলী (বিদ্যুুৎ) কর্তৃক চুক্তি এবং স্পেসিফিকেশন মোতাবেক মালামালসমূহের গুণগত মান নিশ্চিত হওয়ার জন্য চুয়েট অথবা স্বনামধন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরীক্ষা করে পুক্সখানুপুক্সখুভাবে যাচাই করতে হবে।

৭৭তম আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আইএইচআরসিজি’র অনুষ্ঠানে-প্রফেসর নসরুল কদির মানবাধিকার রক্ষায় দেশী-বিদেশী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গণমূখী কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর এস.এম. নসরুল কদির বলেছেন-বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভ করেছে। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পর এখনও পর্যন্ত মানুষ গণতান্ত্রিক অধিকার, বাক স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার রক্ষায় সংগ্রাম করে যাচ্ছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যে সরকার আসুক না কেন, তাদেরকে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের দিকে অধিক মনোযোগী হতে হবে। এবং এ কাজে মানববাধিকার সংগঠনগুলোকে মানবাধিকার রক্ষায় দেশী-বিদেশী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গণমূখী কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে। তিনি আজ সকাল ১০ ঘটিকায় ৭৭তম আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে আইএইচআরসিজি বাংলাদেশ’র উদ্যোগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন সম্মেলন কক্ষে এক আলোচনা সভা ও সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন। উক্ত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইএইচআরসিজি বাংলাদেশ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো: আমির হোসেন খাঁন। অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্যে আইএইচআরসিজি বাংলাদেশ’র জেনারেল সেক্রেটারী সৈয়দ মোস্তফা আলম বলেন, মানবাধিকার সংগঠনের নামে বাংলাদেশের কোন জায়গায় চাঁদাবাজী দখলবাজী, মামলা বাজী করে জনগণকে হয়রানী করা যাবে না। যারা এ কাজে জড়িত থাকবেন তাদেরকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিতে হবে। এবং আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য জনমুখী এবং স্বাধীনতা রক্ষায় যে দল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে তাদেরকে নির্বাচিত করার আহ্বান জানান। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আইএইচআরসিজি’র নির্বাহী পরিচালক নুরুল আবসার তৌহিদ বলেন, মানবাধিকার সংগঠনকে বাংলাদেশে প্রান্তিক জনগণের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য সকল জেলায় সৎ ও যোগ্য মানুষকে সংগঠনের নেতৃত্বে আসার আহ্বান জানান। আইএইচআরসিজি চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়কারী মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব খান সম্রাট, নেত্রী নাহিদা আক্তার নাজু ও চম্পা রানী নন্দীর যৌথ সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক মাঈন উদ্দীন আহমদ, সংঠনের নারী ও শিশু বিষয়ক সম্পাদিকা তাহেরা শারমীন, সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার আবু তৈয়ব, সংগঠনের বিভাগীয় নেতা মোঃ আব্দুর রহিম, পটিয়া উপজেলার সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নারী নেত্রী আফরোজা বেগম জলি, অপকার নির্বাহী পরিচালক মোঃ আলমগীর, চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইউনুচ তালুকদার, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ওহাব, চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী ডা. জামাল উদ্দিন, আর্ন্তাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মোঃ মোশারফ হোসেন, সীতাকুন্ড উপজেলার সভাপতি মোঃ মুসলিম উদ্দিন ভূইয়া, মহানগরের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাবেদ চৌধুরী, সংগঠনের নারী নেত্রী জান্নাতুল মাওয়া মারুফা, শারমীন সরকার, জোহরা সেলিম, সীতাকুন্ড পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর মাসুদা বেগম, নারী উদ্যোক্তা মনিরা দিলশাদ তানসি, সংগঠনের নেতা যথাক্রমে-হাজী নুরুল ইসলাম, তাহেরা মহরম, ফাহমিনা আলম, ইঞ্জি: কাজী মিজান, এনাম হোসেন, মোঃ আলাউদ্দিন, আব্দুল কাদের চৌধুরী, মোঃ ইয়াছিন, মোঃ রাজু চৌধুরী, তৌহিদুল আলম তালুদার, মোঃ ইকরাম, ইব্রাহিম লালন, সঙ্গীত শিল্পী এস.বি সুমি, মোঃ ইমাম উদ্দিন, মোঃ আজহারুল ইসলাম তামিম, শান্ত দে, ফয়জুল হক, আসিফ রোহান, মোঃ ইয়াছিন প্রিন্স, তাহমিনা আক্তার প্রমুখ। ৭৭তম আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে কেক কেটে এবং অনুষ্ঠান শেষে বিগত কর্মকাণ্ডের উপর সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের কাছে সনদপত্র বিতরণ করা হয়।