সিআরবির শিরীষতলায় অনুষ্ঠান করতে লাগবে টাকা

নগরের শান্ত, সবুজ, উন্মুক্ত জায়গা-সিআরবি এলাকায় অনুষ্ঠান আয়োজনকারীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি রেলওয়ের আয় বাড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা রেলওয়ের ভাড়া আদায়ের সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ।

সংশ্লিষ্টরা জানান-ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং বিনামূল্যে উন্মুক্ত ও ছায়াঘেরা বড় জায়গা ব্যবহারের সুযোগ থাকায় সিআরবিতে অনুষ্ঠানের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। বাণিজ্যিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনকারীদের প্রথম পছন্দে পরিণত হয়েছে সিআরবির শিরীষতলা। এতোদিন রেলওয়ের মালিকানাধীন এই জায়গায় অনুষ্ঠান আয়োজনে কেবল অনুমতি নিলেই হতো। কোনো ভাড়া পরিশোধ করতে হতো না।

 

সম্প্রতি রেলভূমি বরাদ্দ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে সিআরবিতে অনুষ্ঠান আয়োজনকারীদের কাছ থেকে ভাড়া আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এরই প্রেক্ষিতে বাণিজ্যিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিকসহ সব ধরনের অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুট জায়গা অনুসারে ঘণ্টাপ্রতি ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। অনুষ্ঠান আয়োজনে অনুমতির আবেদনের সঙ্গে এই ভাড়া আদায়ের সিদ্ধান্ত হয়।

 

কোন সময়ের জন্য কত ভাড়া:

রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানান-সিআরবির শিরীষতলা মাঠের আয়তন ৬২ হাজার ৬১৭ বর্গফুট। এই মাঠের ভাড়া প্রতিঘণ্টায় ১ হাজার ৭৫০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিদিনের ভাড়া ৪২ হাজার, প্রতিমাসের ভাড়া ১২ লাখ ৫২ হাজার ৩৪০ এবং বাৎসরিক ভাড়া ১ কোটি ৫০ লাখ ২৮ হাজার ৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট যোগ হবে।

 

সিআরবিতে অনুষ্ঠান অয়োজনের অনুমতি সংক্রান্ত বিষয়গুলো তদারকি করে রেলওয়ের সিনিয়র ওয়েলফেয়ার অফিসারের কার্যালয়। এই কার্যালয়ের ওয়েলফেয়ার ইন্সপেক্টর মাহবুবুর রহমান  বলেন, রেলভূমি বরাদ্দ কমিটির সুপারিশ রেলওয়ের ডিজির দপ্তর থেকে অনুমোদনের পর সিআরবিতে অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে ভাড়া আদায় শুরু হয়েছে।

 

তিনি আরো বলেন, অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে আগের মতোই সোনালী ব্যাংকের নির্দিষ্ট একাউন্টে ৫০০ টাকা জমা দিয়ে একটি আবেদনপত্র সংগ্রহ করতে হবে। এরপর নির্ধারিত ভাড়া সোনালী ব্যাংকের নির্দিষ্ট একাউন্টে জমা দিয়ে রিসিভ কপি আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপকের দপ্তর সবকিছু যাচাই-বাছাই শেষে অনুমতি দেবেন।

 

সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় এই পদক্ষেপ:

রেলভূমি বরাদ্দ কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে  বলেন, গত কয়েক বছরে সিআরবিতে অনুষ্ঠানের হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। এসব অনুষ্ঠানের শব্দদূষণ ও জনসমাগমের কারণে সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়েছে। ভাড়া আদায়ের সিদ্ধান্ত গণহারে অনুষ্ঠান আয়োজনে নিরুৎসাহিত করার একটি পদক্ষেপ।

 

তিনি আরো বলেন, শুধু অনুষ্ঠান থেকে ভাড়া আদায় নয়- সিআরবি এলাকায় বসা ফুড কোর্ট গুলোকেও আমরা নিয়মের মধ্যে এনেছি। তাদের কাছ থেকেও বাৎসরিক ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এতে সিআরবি এলাকায় শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি রেলওয়ের আয় বাড়বে বলে আমরা আশা করছি।

 

সামাজিক সংগঠনগুলোর প্রতিবাদ:

এদিকে সিআরবিতে অনুষ্ঠান আয়োজনে ভাড়া আদায়ের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে চট্টগ্রাম নগরে কাজ করা সামাজিক সংগঠনগুলোর এলায়েন্স-সোশ্যাল অর্গানাইজেশন ফোরাম। ভাড়া আদায়ের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গতকাল বুধবার রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান ও সিআরবিতে মানববন্ধনও করেছে সংগঠনটি।

 

সোশ্যাল অর্গানাইজেশন ফোরামের প্রধান সমন্বয়ক বায়েজিদ সুমন , রেলওয়ের এই সিদ্ধান্ত গণবিরোধী। আমরা সামাজিক অনুষ্ঠান করি। ভাড়া বাবদ যদি বড় অঙ্কের টাকা খরচ হয়, তাহলে মানুষের জন্য কাজ করবো কীভাবে। অবিলম্বে সামাজিক ও দাতব্য অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ভাড়া আদায়ের সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। অন্যথায় আমরা আন্দোলনে যাবো।

 

চট্টগ্রামের মানুষ কষ্ট পাবে:

সিআরবিতে রেলওয়ের ধার্য করা ভাড়া যৌক্তিক নয় বলে মনে করেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার। তিনি  বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ডিসি হিলের দুয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সিআরবি খুলে দেওয়ায় চট্টগ্রামের মানুষ রেলওয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ। তবে এখন তারা যে হারে এখানে ভাড়া বসিয়েছে তা অযৌক্তিক। এতে চট্টগ্রামের মানুষ কষ্ট পাবে। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য সিআরবির ভাড়া দৈনিক ১ হাজার টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়।