Search
Close this search box.

হাসপাতালের কেনাকাটায় ডা. রেজাউলের কোটি টাকার অনিয়ম

ঝিনাইদহ জেলা সদর হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলামের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৯ লাখ টাকার কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে ২০২৪-২০২৫ নিরীক্ষা অর্থ বছরের জন্য গঠিত নিরীক্ষা দল ঝিনাইদহ জেলা সদর হাসপাতালের বিল ভাউচার, চুক্তি কার্যাদেশ, ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ভাউচার, ডেলিভারি চালান, ভ্যাট চালান, ইডিসিএলের মূল্য তালিকা ও ব্যয় বিবরণী পর্যালোচনা করে এই আপত্তি প্রতিবেদন দাখিল করে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাইমিনুল ইসলামের তত্ত্বাবধানে এই অডিট কর্যক্রম পরিচালিত হয়।
অডিট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ওষুধ ও অস্ত্রপচার সরঞ্জামাদি (এমএসআর) কেনার জন্য ৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
এই বরাদ্দ থেকে ৬৫ শতাংশ অর্থ ব্যয়ে ওষুধ কেনার সরকারি নির্দেশনা থাকলেও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম বিধি বহির্ভূতভাবে ৯১.৯২ শতাংশ টাকা ব্যয়ে শুধুমাত্র ওষুধ ক্রয় করেছেন। এতে সরকারের ১ কোটি ৩৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এ ছাড়া তিনি প্যারাগন নামে একটি ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বেশি দামে মন্টিলুকাস ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট কিনেছেন। কিন্তু ওই দুইটি ওষুধ সরকারি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাসেনশিয়াল ড্রাগ (ইডিসিএল) থেকে কেনার নির্দেশনা ছিল।
অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগস কম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) থেকে ১০ টাকা ৬৭ পয়সা দামে মন্টিলুকাস ও ২ টাকা ৯২ পয়সা দামে ৫০০ মিলি গ্রামের ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট ক্রয়ের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু হাসপাতালটির তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক নিয়মবর্হিভূতভাবে বেসরকারি ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্যারাগন এন্টারপ্রাইজ থেকে ১৫ টাকা ৮৪ পয়সা দামে মন্টিলুকাস ও ৭ টাকা ৯০ পয়সা দামে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট কিনেছেন। এই খাতেই অতিরিক্ত নিয়মবহির্ভূত ব্যয় হয়েছে ৩০ লাখ ৫১ হাজার টাকা।
অডিটের তথ্যমতে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জিএফআর অনুচ্ছেদ ১০(২) অনুসারে, ব্যয় প্রাইমানিক চাহিদার চেয়ে বেশি হওয়া উচিত নয়।
সাধারণ আর্থিক বিধির বিধি-১২ ধারা অনুযায়ী, প্রয়োজন মূল্যায়নের চেয়ে বেশি ক্রয়েরও কোনো অনুমতি নেই। কিন্তু কোনো নিয়মেরই তোয়াক্কা করেননি জেলা সদর হাসপাতালের সাবেক প্রধান ডা. সৈয়দ রেজাউল। আসবাবপত্র কেনার ভ্যাট কর্তনেও বড় রকমের অনিয়ম করেছেন তিনি। আসবাবপত্র কেনার পর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কর্তনের সরকারি বিধান থাকলেও তিনি আসবাবপত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স হারমাইন এন্টারপ্রাইজ বিল পরিশোধের সময় ভ্যাট কর্তন করেছে মাত্র ৭.৫ শতাংশ। ফলে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে অন্তত ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা।
এ ছাড়া প্রয়োজন মূল্যায়ন ছাড়াই তিনি ভোগ্য জিনিস কেনায় ৪৪ লাখ ৩১ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করেছেন।
অডিট আপত্তির বিষয়ে জানতে ঝিনাইদহ জেলা সদর হাসপাতালের হাসপাতালের সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলামের ব্যবহৃত মোবাইলে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে ঝিনাইদহ জেলা সদর হাসপাতালের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে একটি জবাব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এর আগে গেল বছরের আগস্টে জেলা সদর হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলামের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে কালের কণ্ঠের অনলাইন ও প্রিন্ট ভার্সনে দুই পর্বের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। যা নিয়ে সেসময় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।