চট্টগ্রাম থেকে অপহরণের ৬ বছর পর ফেনীতে মিলল কাস্টমস কর্মকর্তার লাশ

 অনলাইন ডেস্ক

ফেনীর ছাগলনাইয়ায় অজ্ঞাত একব্যক্তির মরদেহ উদ্ধারের পর তার পকেটে পাওয়া একটি ব্যাংক চেকের সূত্র ধরে বেরিয়ে এসেছে হারিয়ে যাওয়া এক ব্যক্তির তথ্য।

শনাক্ত করা হয় ছয় বছর আগে চট্টগ্রাম থেকে ‘অপহৃত’ কাস্টমস কর্মকর্তা আবদুল আহাদের (৪৬) মরদেহ।

নিহতের পরিবার দাবি করেছেন, অপহরণের সময় মুক্তিপণ হিসেবে দুই লাখ টাকা দেয়ার পরও তাকে ফিরে পাননি তারা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের সামনে অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে অজ্ঞান অবস্থায় স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। খবর পেয়ে ছাগলনাইয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল বাশারের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল হাসপাতাল পরিদর্শন করেন।

মরদেহের পরিচয় শনাক্তের জন্য পুলিশ তার সঙ্গে থাকা কাগজপত্র পরীক্ষা করতে গিয়ে উত্তরা ব্যাংক ফেনীর বিরিঞ্চি শাখার একটি চেক পান। চেকে হিসাবধারীর নাম আবদুল আহাদ উল্লেখ থাকায় পুলিশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ হিসাব নম্বর যাচাই করে নিহতের পরিচয় নিশ্চিত করেন।

ছাগলনাইয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আবুল বাশার জানান, ‘ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, নিহত আবদুল আহাদ মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া থানার হাজীপুর ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের ইমানী মিয়ার ছেলে। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।’

নিহতের পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পর স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা দেয়। বিশেষ করে ফেনীতে কীভাবে তার ব্যাংক হিসাব খোলা হলো তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। পরে দিনভর নানা তথ্য যাচাই করলে ধীরে ধীরে প্রকাশ পায় তার ফেনীতে আসার পেছনের গল্প।

নিহতের ছোট বোন নাঈমা নাসরিন মনি বলেন, ‘আমার ভাই আবদুল আহাদ এক সময় সিলেটের ব্রিটানিকা উইমেন্স কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। পরবর্তীতে সিলেট বিমানবন্দরে কাস্টমসের অডিটর পদে যোগ দেন। পরবর্তীতে একই পদে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালন করেন। তবে ২০১৯ সালের ১ মে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে কর্তব্যরত অবস্থায় হঠাৎ ভাইয়ের মুঠোফোন বন্ধ পান পরিবারের সদস্যরা। কিছু সময় পর একটি অচেনা নম্বর থেকে কল দিয়ে জানানো হয়, আহাদকে অপহরণ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সে সময় বিকাশের মাধ্যমে দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিলে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে বলে জানায় অপহরণকারীরা। আমরা তখন তাদের কথামতো বিকাশে দুই লাখ টাকা পাঠাই। কিন্তু টাকা পাঠানোর পর থেকেই তাদের নম্বর বন্ধ পাই। আহাদের সঙ্গেও এরপর আর যোগাযোগ করা যায়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে স্থানীয় থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হলেও ছয় বছর পেরিয়ে গেছে-তবুও আহাদকে পাওয়া যায়নি। তবে বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পারি ফেনীর ছাগলনাইয়ায় আমার ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।’

একই ঘটনায় নিহতের ভাগিনা মোস্তাফিজুর রহমান সাকিফ জানান, ‘নিহত আহাদের দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। ছোট মেয়ে গর্ভে থাকাকালীনই তিনি নিখোঁজ হন। ছয় বছর ধরে মামাকে খুঁজেছি, কিন্তু কোনো সন্ধান পাইনি। এ সময় মামার নিখোঁজের শোকে আমার নানা-নানি মারা গেছেন। এখন তার মরদেহ উদ্ধার হওয়া পরিবারজুড়ে নতুন এক শোক ও রহস্যের জন্ম দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার মামা ছিলেন একটি স্বচ্ছল পরিবারের সন্তান। অপহরণের পর থেকে তিনি কেন আর যোগাযোগ করেননি, আর এত বছর পর কীভাবে তার মরদেহ মিলল-এ সব প্রশ্ন এখন গভীর উদ্বেগের।’

এ বিষয়ে নিহত আবদুল আহাদের স্ত্রী মাহবুবা আক্তার সুমারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে বোন নাঈমা নাসরিন মনি জানান, মরদেহ বুঝে নিতে নিহতের বড় ভাই আবদুল নুর বাড়ি থেকে ফেনীর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।

আবদুল আহাদের মরদেহ উদ্ধারের বিষয়ে ছাগলনাইয়া থানা পুলিশের উপপরিদর্শক মো. শাহ আলম জানান, ‘নিহতের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, স্ট্রোকজনিত কারণে তিনি মারা গেছেন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।’ একটি অনলাইন বার্তা সংস্থার খবর