বাংলাদেশে সিগারেট সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় তরুণদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের তরুণ চিকিৎসকরা। তাদের অভিমত, সিগারেটকে সবার নাগালের বাইরে না নেওয়া গেলে ধূমপান ঠেকানো কঠিন হবে। এজন্য সিগারেটের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে তাদের পক্ষ থেকে।
শনিবার (১০ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রস্তাব রাখেন তরুণ চিকিৎসকরা।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, বর্তমানে সিগারেটের চারটি মূল্যস্তর (নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ ও প্রিমিয়াম) রয়েছে। এর মধ্যে নিম্ন ও মধ্যম স্তরের দামের পার্থক্য খুব কম, ফলে এক স্তর থেকে অন্য স্তরে যাওয়াটা খুব সহজ।
তাদের প্রস্তাব, নিম্ন ও মধ্যম স্তর এক করে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের দাম কমপক্ষে ৯০ টাকা করা হোক। পাশাপাশি উচ্চ স্তরের দাম ১৪০ টাকা অপরিবর্তিত রাখা এবং প্রিমিয়াম স্তরের দাম ১৯০ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করেন তারা।
প্ল্যাটফর্ম ডক্টরস ফাউন্ডেশনের ফারজানা রহমান মুন বলেন, সিগারেট সস্তা থাকলে তরুণেরা সহজেই ধূমপানে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। কর কাঠামো ঠিক করে দাম বাড়ালে ২৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান থেকে ফিরে আসতে পারেন এবং প্রায় ১৭ লাখ মানুষের অকালমৃত্যু ঠেকানো সম্ভব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল জানান, বর্তমানে তামাক থেকে যত রাজস্ব আসে, তা তামাকজনিত রোগের চিকিৎসায় হওয়া ব্যয়ের মাত্র ৭৫ শতাংশই পূরণ করতে পারে। কার্যকর কর নীতি চালু করলে রাজস্ব আগের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বাড়ানো সম্ভব।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ তামাকজনিত অসংক্রামক রোগে মারা যাচ্ছেন। এই মৃত্যু ঠেকাতে তামাকপণ্যের দাম বাড়িয়ে তা জনগণের নাগালের বাইরে নিতে হবে।
চিকিৎসকদের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, সিগারেটের খুচরা মূল্যের ওপর ৬৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ ভ্যাট এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখার দাবি জানানো হয়।
এছাড়াও তামাকের অন্য পণ্যের ক্ষেত্রেও দাম বাড়ানোর প্রস্তাব এসেছে। এগুলো হলো:
১. ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির দাম ২৫ টাকা
২. ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকার বিড়ির দাম ২০ টাকা
৩. উভয় ক্ষেত্রেই ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক
৪. জর্দা ও গুলের ক্ষেত্রে ১০ গ্রামে যথাক্রমে ৫৫ ও ৩০ টাকা মূল্য এবং ৬০ শতাংশ শুল্ক প্রস্তাব
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরামর্শক মো. নাইমুল আজম খান, সমন্বয়ক ডা. অরুনা সরকার, প্রজ্ঞার হেড অব প্রোগ্রামস মো. হাসান শাহরিয়ার এবং বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি মো. রাশেদ রাব্বি।